বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজার রায় বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী গণমাধ্যমই গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
দেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেত্রী ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে পলাতক আছেন এবং তার অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এই রায় নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ানসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি, আল–জাজিরা এবং ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এই রায়ের খবর সরাসরি প্রচার করেছে।
মামলার দুই নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। তবে এক নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বিবিসির খবরের শিরোনাম করা হয়েছে—‘নৃশংসভাবে বিক্ষোভ দমনের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক নেতা শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা নিয়ে এখন ভারতের ওপর চাপ বাড়বে।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেওয়ার অভিযোগে হাসিনার অনুপস্থিতিতে হওয়া বিচারে তাকে যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা এসেছে রুশ গণমাধ্যম আরটি’র খবরেও। রায়ের আগে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার অভিমুখে আওয়ামীলীগ বিরোধীদের বিক্ষোভের কথাও জানিয়েছে তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে হাসিনার রায়ের প্রভাবে বাংলাদেশজুড়ে নতুন অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ের পর আদালতচত্বরে আনন্দের হিল্লোল ছড়িয়ে পড়ার কথাও জানায় তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরের শিরোনাম করা হয়েছে—‘শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দীর্ঘ কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের একটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
প্যারিসভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক গোলাম মর্তুজা মজুমদারের দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত রায়ের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের ‘রাজনীতিতে হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে’ বলে তাদেরকে বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক টমাস কিন। তিনি হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটির সমালোচনাও করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যাবে। কিন্তু হাসিনার ছেলে এবং তাঁর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ রায়ের প্রাক্কালে রয়টার্সকে বলেন, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁরা আপিল করবেন না।
আল জাজিরায় ‘বাংলাদেশ’স হাসিনা সেনটেন্সড টু ডেথ ফর ক্রাইমস এগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগের বিস্তারিত আছে। এ রায় বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলবে বলেও মনে করছে তারা।
ফেব্রুয়ারির ‘আসন্ন নির্বাচনের’ আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলোও। ডন, জিও নিউজের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলোতে তারা মামলার টাইমলাইন, অভিযোগের নানান দিকও তুলে ধরেছে।
এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস, হিন্দুসহ ভারতের সব সংবাদমাধ্যমে সোমবারের রায়ের খবর এসেছে। তারা রায়ের আগে-পরে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত কতটুকু বাধ্য তা নিয়েও নানান মন্তব্য ও খবর প্রকাশ করেছে।
মামলার দুই নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। তবে এক নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেন, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। একইসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করেছেন, মামুনের অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ হলেও সত্য উন্মোচন করায় তার সাজা কম হবে।












